ক্যামেরা ও চোখ
আহমেদ ফিরোজ
ক্যামেরার রেঞ্জের ভেতরে ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার ওপাশে। পর পর দুটো মিনিবাস ক্রস করায় ঠিক দেখা যাচ্ছিল না। এর পর হঠাৎ-ই হাঁটা শুরু করল দক্ষিণ দিকে। কারওয়ানবাজারের এই জায়গাটায় ভিড় একটু বেশিই। সবসময় ট্রাফিকজট লেগেই থাকে।
একটি পত্রিকা হাউজে পুনরায় ছেলেটিকে দেখা গেল, ফিচার সম্পাদক বলছেন—অন্য দু’তিনজন মিলে গিলছেন। দূর থেকে কিছুই শোনা যাচ্ছিল না। কাছাকাছি হলে, ছেলেটি কিছু প্লান শেয়ার করছিল সম্পাদকের সঙ্গে; নতুন কি কিছু করা যায়? এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হলো বুড়ো সাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে ধারাবাহিকভাবে।
অশীতিপর চল্লিশ দশকের অন্যতম কবি আবুল হোসেনের নাম প্রথমেই উঠে এলো। কিন্তু বাধ সাধলো লাবণ্য, সে বলল—আবুল হোসেন নয়, মিজানুর রহমান ত্রৈমাসিক বেশি বুড়ো, বেশি অসুস্থ। তারই সাক্ষাৎকার নেয়া হোক আগে। লাবণ্যর কথায় অমিত হ্যাঁ-না কোনো জবাব দেয় না, সামনে রাখা কাগজে আনমনে কিছু একটা লিখতে শুরু করে। সাক্ষাৎকার নেয়ার ক্ষেত্রে অমিতের মনে এলো, মৃতপ্রায় বা শীঘ্রই মারা যেতে পারেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে আলাপচারিতা অগ্রাধিকার পাবে। সম্পাদকের ইচ্ছে ছিল—এসব করে অন্তত কিছু মানুষের শেষ সাক্ষাৎকারটি ছাপা অক্ষরে দেখবার, তাতে করে পত্রিকাটি সাহিত্যিতিহাসে স্থান করে নেবে। অমিতও শেষ সাক্ষাৎকার গ্রহণের মোহ এড়াতে পারে না—যা তাকে স্মরণীয়-টরণীয় কিছু একটা করতে পারে।
মিরপুরের দীর্ঘ বসবাসে ক্লান্ত ভাড়া বাসার দিকে প্রতিদিনকার মতো ভলভো বাসে চড়ে ফেরার পথে লাবণ্যর দ্বিমতে অমিতও শেষপর্যন্ত সায় দেয়—ঠিক আছে, দু’জনেরই সাক্ষাৎকার নেয়া হবে।
প্রশ্ন পাল্টা প্রশ্ন তৈরির প্রক্রিয়া চলে, সঙ্গে একগাদা পড়াশুনা : অতীত-বর্তমান লিখিত-অলিখিত হিস্ট্রি খুঁজে বের করবার। অমিতের সঙ্গী এখন লাবণ্য। সে-ও পত্রিকায় কন্ট্রিবিউটর হিসাবে কাজ করে, পাশাপাশি পারটাইম জব—একটি অনুবাদ কেন্দ্রে।
ফ্রিল্যান্স লেখালেখিতে অমিতের সুনাম বেশ। মিজানুর রহমান ত্রৈমাসিকের সাক্ষাৎকারটি পরের সপ্তাহেই ছাপা হয়। লাবণ্য খুশি : দু’জনে মিলে একটি ভালো কাজ শুরু করতে পেরেছে।
বিকেলে পাবলিক লাইব্রেরিতে বসে কথা হচ্ছিল, আসাদ এসে জানাল, ফ্রেন্ডদ্বয় সাক্ষাৎকারটি পড়লাম, বেশ তো জমিয়ে লিখেছ, কিন্তু এখন চল জামাতে দেখে আসি। জামাতে দেখে আসি মানে, অমিত বলল। কেন শোননি, ত্রৈমাসিক সাহেব তো হাসপাতালে। আসাদ রসিয়ে রসিয়ে কথা বলে, কিন্তু এমন সংবাদও কি দাঁত-মুখ অনিয়ন্ত্রিত করে দিতে হয়, লাবণ্য ভাবল।
বারডেমের কেবিনে পৌঁছেই চোখে পড়ল অনেক লোকের ভিড়। তিনি আর কখনো কথা বলবেন না, অমিতকে জড়িয়ে ধরে অন্যবন্ধু চন্দন বলল। লাবণ্য স্থির দাঁড়িয়ে আছে। অমিত কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না।
পরের সপ্তাহে রুটিন মাফিক অমিত ও লাবণ্যকে দেখা গেল আবুল হোসেন-এর বাসায়। ক্রিয়া-কর্ম চলল ঠিক-ঠাক। এর পর দু’জনকে রাস্তা পার হতে দেখা গেল, একধরনের বেদনার ছায়া উঁকি দিয়ে আছে তাদের মুখে। হাঁটার ভঙ্গি অনির্দিষ্টতায় : নিস্তব্ধ, নিস্তরঙ্গ সে যাত্রা। কথাবার্তায় মনে হলো দু’জনেই দ্বিধাগ্রস্ত। তারা হেঁটে আরো অনেকটা দূর এগিয়ে গেল, দুরত্ব বেড়ে গেলে দৃশ্য কমতে থাকে।
সাক্ষাৎকার নেয়া শেষ হলেও, সম্পাদকের অনুরোধে সাম্প্রতিক কালের এককপি ছবি সংগ্রহে আবারো অমিতকে কবির বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। দু’চারজন এরই মধ্যে তার পাশ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছে। দরজা হাট করে খোলা, বিশেষ কোনো কথাবার্তা নাই। ভেতরে ঢুকতেই মিহি কান্না ভেসে আসছিল ওপর থেকে। সে ঠিক করল—কারো সঙ্গে কথা বলবে না। বাইরে এসে দেখল, খয়েরি রঙের দোতলা বাড়িটি কীরকম একা দাঁড়িয়ে আছে—বোবা ভঙ্গিমায়।
সাক্ষাৎকার ছাপা হলো পুরনো ছবিসহ, পাশেই শোক সংবাদ।
পরিচিতমহলে অমিতকে প্রায় এক সপ্তাহ খুঁজে পাওয়া গেল না। লাবণ্যকে দেখা গেল সম্পাদকের টেবিলে মনমরা হয়ে বসে আছে।
ময়লা আবর্জনায় ঘিনঘিনে দুর্গন্ধ পেরিয়ে মুক্ত বাতাস আর নিঃশব্দের টানে দূরে বুড়িগঙ্গার কূলে একা বসে অমিত, কোথাও কেউ নেই। কিছুক্ষণ পর লাবণ্যকে দেখা গেল।
কোনোক্রমেই অমিতকে রাজি করানো গেল না পরবর্তী সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য। তার একটিই যুক্তি, সাক্ষাৎকার দিলে কি মানুষকে মরে যেতে হয়? পত্রিকার সম্পাদক হাসান মাহমুদ, খুব করে বোঝালেন—দেখ, তোমরা যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছ—তারা দু’জনেই বয়স্ক-বৃদ্ধ; তাদের মৃত্যু ঘনিয়েই আসছিল। তা ছাড়া তোমরা তো চেয়েইছিলে এটি যেন তার জীবনের শেষ সাক্ষাৎকার হয়। এতে করে ভেঙে পড়লে চলবে! মৃত্যুতে তো আর মানুষের হাত নাই।
এবার তারা মধ্যবয়স্ক একজন কবিকে নির্বাচন করল, নাম ত্রিদিব দস্তিদার। বয়স চল্লিশ-পয়তাল্লিশ হবে। মোহাম্মদপুরের বাসায় দু’দিন ধরে আলাপচারিতা চলল, বেশ বড় একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হলো পত্রিকায়।
এরপর অমিত-লাবণ্যকে টিএসসিতে দেখা গেল ফুঁচকা খেতে। অমিতের হাতে পত্রিকা। বাসা থেকে ফোন আসায় লাবণ্যকে চলে যেতে হলো। অমিত একাই গেল ত্রিদিব দস্তিদার-এর বাসায়। তালা ঝুলছে, বিদ্যুৎ নাই, ঘুটঘুটে অন্ধকার।
রাত দশটার সংবাদে অনেকগুলো শোক সংবাদ পড়া হচ্ছিল। অমিতের বুকটা বারবার কেঁপে উঠল, এই বুঝি ত্রিদিব দস্তিদার-এর নাম পড়া হবে। না, তা আর হলো না। রাত বারোটার দিকে অমিত ঘুমাতে গেল, এটা তার সকাল সকাল ঘুমানোর প্র্যাকটিস-পর্বের একটা।
সকালে পত্রিকা খুলে অমিত প্রথমেই শোক সংবাদ পড়ল। কোনো পরিচিত নাম নেই। এরপর ফোন করল লাবণ্যকে, পর পর আসাদ, চন্দনকে করে সম্পাদক এবং সবশেষে ত্রিদিব দস্তিদার। ত্রিদিব দস্তিদার-এর মোবাইলে অদ্ভুতসব আওয়াজ ভেসে আসছিল, কিন্তু শেষপর্যন্ত কেউই রিসিভ করল না। অমিতের কপাল ঘেমে চিবুক চুইয়ে পড়ল। সে এবার বাথরুমে ঢুকল, পুরনো অভ্যাসে দীর্ঘসময় ধরে মাথায় পানি ঢালল। একসময় পানির শব্দও থেমে গেল।
অমিতকে দেখা গেল চারুকলার সামনে একা, ছবির হাটে বসে থাকতে। কয়েকটি লাশ সাদা কাপড়ে মোড়ানো, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর মাজার সংলগ্ন মসজিদের সামনে। লোকজন বলাবলি করছিল, এটাই ঠিক হলো, এখন থেকে যত কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী মারা যাবে—তাদের প্রত্যেকের প্রথম অথবা দ্বিতীয় জানাযা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ চত্বরে। অনেকে বেশ বাহবা দিচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। অমিতের মনে হলো, ত্রিদিব দস্তিদার কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন? আর উনি তো হিন্দু—তার লাশকে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ কর্তৃপক্ষ জায়গা দিয়ে সম্মান জানাতে দেবে? মৃত্যুভয় অমিত-লাবণ্যকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ থেকে ক্রমশ দূরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু সম্পাদকের পীড়াপিড়িতে শেষপর্যন্ত আবারো রাজি হতে হয়। এবার সাহিত্যিক নয়—সাংবাদিক। সিলেটের গুণী সাংবাদিক আবদুল কাদির, এখন রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সামনে নির্বাচন, অনুরোধের ঢেঁকি অমিতকে গেলানো গেলেও সম্পাদককে প্রতিশ্রুতি করতে হয় আর কোনো সাক্ষাৎকার গ্রহণে তাকে পাঠানো হবে না।
অমিত সিলেটে কখনো যায়নি। বাস-ট্রেন এই-করে শেষপর্যন্ত ট্রেনেই যাত্রা। তাও আবার দ্রুতগামী ট্রেন না-পেয়ে হাফ-দ্রুতগামী ট্রেনের সেকেন্ড ক্লাসের টিকিট মিলল। নামতে হবে মূল শহরের আগের স্টেশনে। শব্দ করে ট্রেন থামলে সে নেমে পড়ে। অপরিচিত সবকিছুই তাকে একধরনের স্বপ্নের গভীরে তলিয়ে দেয়। অমিত একটা সিগারেট ধরায়।
একটু দূরে টিকিটি-কাউন্টারের পোড়া লাল ইটের ধ্বংসোন্মুখ বিল্ডিংয়ের পাশ ঘেঁষে জানালা-দরজা ব্যতিরেকে দাঁড়িয়ে আছে আরেকটি পরিত্যক্ত ঘর। ঘরের ভেতরকার ক্ষীণকায় আলোর রেখা বাইরের অন্ধকারকে ক্ষণে ক্ষণে ছিন্ন করছে বাতাসের বুনন মিহিতে। অর্ধেক চাঁদ আকাশে গুটিকয় স্পষ্ট তারার সঙ্গে দেখা গেলেও আলো নিভু-প্রায়। অমিত এগিয়ে গেল, আলোর কাছে কাউকে পাওয়া যাবে এই ভেবে। ভেতরে কেউ নেই। ফিরে আসতেই চিকন কণ্ঠে ‘অমিত’ বলে ডাকল কেউ। সে ফিরে তাকাল, দেখতে পেল—পরিত্যক্ত ঘরের জানালা গলে অন্ধকারে গাছের পাশে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। চোখ ডলে লক্ষ্য করল—একটা কঙ্কালসার মানুষ। সে জানালার কাছাকাছি গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখল, মানুষটির পা মাটি থেকে উপরে। সে ‘ভূত ভূত’ বলে চিৎকার দিয়ে বেরিয়ে এলো। অকস্মাৎ তার চোখের সামনে দৃশ্যটি পুনশ্চ ভেসে উঠল, সে স্বাভাবিক হবার ফুরসতে বুঝতে পারল—ওটা ভূত নয়, মানুষটি ঝুলে আছে, গলায় রশি পেঁচানো। তার চোখ এবার গাছের ডালে গিয়ে ঠিকরে পড়ল।
সম্বিত ফিরে পেয়ে অমিত দেখল, তার পাশে একটা বৃদ্ধ নুয়ে-পড়া লোক দাঁড়িয়ে আছে। অমিত কথা বলার আগেই লোকটি বলল, আপনি যার কাছে এসেছেন—তার খোঁজ দিতে পারে ঐ যে দূরে—প্লাটফর্মের শেষমাথায় বুড়ো-দরবেশ; আর তার দোকানে চা-ও খেতে পারেন। পরাজিত সৈনিকের শত্রু-পক্ষের ব্যারাক থেকে ফেরা চেহারায় অমিত গুঁটি গুঁটি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে দ্রুত সে পৌঁছে যায় বুড়ো দরবেশের কাছে। সাদামাটা একজন চায়ের দোকানদারকে কেন দরবেশ বলা হলো—তা তার মস্তিষ্কের হার্ডডিক্স লোড নিতে পারল না, হাইড হয়ে গেল। তৃষ্ণার্থ কণ্ঠে ঢোক গিলে জানতে চাইল, আবদুল কাদির সাহেবের বাড়িটা কোনদিকে হবে বলবেন?
—কোন আবদল কাদির?
—জ্বি, সাংবাদিক, এখন রাজনীতি করেন?
—ও, আমাদের কাদারে।
বুড়ো দোকানদারের কণ্ঠে ‘কাদারে’ বেশ শোনাল।
—কেন বাপু কাদারের কাছে।
—আমি ঢাকা থেকে এসেছি, ওনার সঙ্গে দেখা করতে; একটা সাক্ষাৎকারও নিতে চাই।
—তাহলে চলো তোমার সঙ্গেই কবর খোঁড়া যাক। কাঁচা মাটি, বেশি সময় লাগবে না।
লোকটা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় এবং দোকানের এককোণ থেকে শাবল বের করে প্লাটফর্ম লম্বালম্বি ফেলে হাঁটতে থাকে। অমিতের সাহস হয় না—লোকটির পিছে পিছে যেতে। সে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। লোকটি হাঁটছে…
দূর থেকে ট্রেনের শব্দ ভেসে এলে তার ফিরে দেখা অনুভূতি কাজ করতে থাকে। শিশুর চোখে কানে থাপা দিয়ে সে বুঝে উঠতে চাইল শব্দগুচ্ছ ট্রেনেরই। কিন্তু বুঝে উঠতে পারল না ট্রেনটি কোন দিক থেকে আসছে। চোখের সঙ্গে মণির আড়াআড়িতে সে একমুহূর্তে পুরো প্লাটফর্ম ও তার আশপাশ দেখে নেয়। এরপর ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। ট্রেন আসে, প্রত্যাশার এক ঝলক আনন্দ ছিটিয়ে উল্টো দিক থেকেই। সে ট্রেনে উঠে বসে। ভাবনা গুলিয়ে ওঠে, বুড়ো দরবেশ চায়ের দোকানদার না ট্রেনে উঠে বসে। ট্রেন শব্দ করে চলতে শুরু করে। সে রাতেই অমিত ঢাকায় ফেরে।
খুব ভোরে দরজায় নক করার শব্দে অমিতের ঘুম ভাঙে। দরজা খুলেই হতভম্ব হয়ে যায় সে। মিজানুর রহমান ত্রৈমাসিক, আবুল হোসেন ও ত্রিদিব দস্তিদারকে সঙ্গে নিয়ে লাবণ্য এসেছে। পেছনে সিলেট রেলস্টেশনের সেই বুড়োটাও। সে আবদুল কাদিরকে খুঁজতে থাকে। তাকে না-দেখে অমিত কিছুটা বিস্মিতই হয়। সবাই এসেছে অথচ একজনই নাই।
কিছুক্ষণ পর আবারো নক। আবদুল কাদির এসেছে, না—বাঁশপাতার আলোর মালিক ও সম্পাদক হাসান মাহমুদ। আসাদ, চন্দনও এসেছে এর পর পর। অমিত কিছুই বুঝে উঠতে পারল না। কেন এমন হচ্ছে, আর সবাই-বা কেন একসঙ্গে আজ এসেছে? সে লাবণ্যকে জিজ্ঞেস করতে চাইল। কিন্তু খোশগল্পে এমনভাবে মেতেছে যে, তার আর জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো না। মন হারানো দিনের চিত্রালোয় ঘরের এককোণে দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে রইল সে। হঠাৎ তার মনে হলো, ভুল করে সে মৃত্যুপরীতে এসে যায়নি তো? এবার সে বেশ সচেতন ভঙ্গিতে সবার দিকে তাকাল এবং একসময় সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে দরজা খুলে হাঁটতে গিয়ে দৌঁড় অতিক্রম করতে চাইল; এরপর দৌঁড়, দৌঁড়, দৌঁড়…
ক্যামেরার রেঞ্জের ভেতরে ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার ওপাশে। গাড়িগুলো দ্রুতগতিতে রাজপথ অতিক্রম করছে। একটা নীলরঙের মাঝারি মিনিবাস এসে তাকে আড়াল করে দাঁড়ল। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার চলতে শুরু করল, এরপর আর কাউকেই দেখা গেল না…